"ভরে দাও আমার ঝুলি, হে মুহাম্মদ ﷺ…" এই অংশটুকু একটা কবিতার পঙ্ক্তি, এভাবে বললে কি শিরক হবে?
"بھر دو جھولی میری یا محمد" (Bhar Do Jholi Meri Ya Muhammad) একটি জনপ্রিয় উর্দু নাত/মুন্নাজাত যা প্রিয় নবী মুহাম্মদ ﷺ-এর দরবারে ভালোবাসা, ভক্তি ও রহমতের ভিক্ষা প্রার্থনায় রচিত।
বাংলা অনুবাদ (সারাংশ):
“হে মুহাম্মদ ﷺ, আমার ঝুলি (ভিক্ষার থলে) ভরে দিন।
আমি আপনার দরজায় খালি হাতে এসেছি, কিছু দিয়ে দিন।
আপনি দাতা, দরিয়াদিল (উদার), আমি আপনার গুণমুগ্ধ ভিখারী।”
এটি মূলত আল্লাহর প্রিয় হাবীব ﷺ-এর মাধ্যমে দোয়া কবুল, রহমত এবং বরকতের জন্য এক হৃদয়ছোঁয়া মিনতি।
“بھر دو جھولی میری یا محمد” (হে মুহাম্মদ, আমার ঝুলি পূর্ণ করে দিন) — এভাবে সরাসরি প্রার্থনা করা *জায়েয নয়*, কারণ এটি তাওহীদের মৌলিক আকিদার বিরুদ্ধে যেতে পারে।
ব্যাখ্যা:
ইসলামী আকিদা অনুযায়ী:
- সাহায্য চাওয়া (دعاء و استغاثہ) শুধু আল্লাহর কাছেই করা যায়।
- রাসূল (সা.) জীবিত থাকা অবস্থায় তাঁর কাছে দোয়া চাইতেন সাহাবিরা, কিন্তু মৃত্যুর পর কেবল আল্লাহর কাছেই সাহায্য প্রার্থনা করা ও তাওয়াসসুল করা জায়েয।
- সরাসরি “হে মুহাম্মদ (সা.), আমাকে দাও” — এভাবে বলা শিরক হিসেবে গণ্য হতে পারে (ইলমে আকিদার দৃষ্টিতে)।
ফতোয়া/রেফারেন্স:
- ফাতাওয়া আল-লাজনাহ আদ-দায়েমা (Saudi Arabia): রাসূল (সা.)-এর কাছে এভাবে সাহায্য চাওয়া — শিরক।
- ইবনে তাইমিয়া, ইমাম নববী, ইবনে আবদুল বার প্রমুখও উল্লেখ করেছেন, দোয়া আল্লাহ ছাড়া কারো নিকট করা বৈধ নয়।
যা করা জায়েয:
- আপনি বলতে পারেন:
"আল্লাহ, রাসূলের ওসিলায় আমার দোয়া কবুল করুন।”
অথবা
"হে আল্লাহ! রাসূলের ভালোবাসায় আমাকে দান করুন।”
সারসংক্ষেপে:
"بھر دو جھولی میری یا محمد" — এই ধরনের বাক্যে সরাসরি নবীর (সা.) কাছে কিছু চাওয়া *জায়েয নয়*। বরং আল্লাহর কাছে চাওয়াই ইসলামী শরিয়তের মূলনীতি।
যদি “بھر دو جھولی میری یا محمد” বাক্যটি এমন *কবিতার ভাষা বা ভক্তিমূলক আবেগের প্রকাশ হিসেবে নেওয়া হয়, যেখানে আল্লাহকেই মূল দাতা হিসেবে বিশ্বাস করা হয়, তবে নির্দিষ্ট শর্তে কিছু আলেম এর *তাওয়ীল (অন্য অর্থে ব্যাখ্যা) করে জায়েয বলেছেন।
যেমন:
- যদি উদ্দেশ্য হয়: “হে রাসূল, আল্লাহর কাছে আমার জন্য দোয়া করুন যেন আমার ঝুলি পূর্ণ হয়”, তাহলে এটি তাওয়াসসুল বা সুপারিশের আবেদন, যা কিছু আলেমের মতে জায়েয।
- উদাহরণ: সাহাবিরা রাসূল (সা.)-এর কাছে জীবিত অবস্থায় দোয়া চাইতেন — “উদ্ধার করুন, দোয়া করুন” ইত্যাদি।
তবে সতর্কতা গুরুত্বপূর্ণ:
- সাধারণ মানুষ এই ধরনের শব্দের গভীর অর্থ না জেনে ব্যবহার করলে সহজেই আকিদাগত ভুল করে ফেলতে পারে।
- এজন্য শব্দচয়ন ও উদ্দেশ্য স্পষ্ট করা জরুরি।
- আকিদা সুরক্ষিত রাখতে সব সময় আল্লাহর কাছেই সরাসরি দোয়া করাই উত্তম ও নিরাপদ।
ফতোয়া সূত্র:
- দারুল উলুম দেওবন্দ: এরকম বাক্য *তাওয়াসসুল বা দুআর আবেদন মনে করলে গুনাহ নয়, তবে সোজাসুজি চাওয়া (যেমন দাতা মনে করা) জায়েয নয়।
- ফাতাওয়া রশিদিয়া, ফাতাওয়া হিন্দিয়া ইত্যাদিতে ব্যাখ্যা আছে।
সারকথা:
অর্থ যদি হয় — “হে রাসূল, আপনি আল্লাহর কাছে আমার জন্য দোয়া করুন” — তাহলে তাওয়াসসুল হিসেবে ব্যাখ্যা করে জায়েয ধরা যায়। তবে ভুল আকিদা বা শব্দ বিভ্রান্তির সম্ভাবনা থাকায় পরিহার করাই উত্তম।